কালোজিরা খাওয়ার ৮টি উপকারতা ও অপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো। আমাদের রান্নাঘরে একটি ছোট্ট দানা সব সময় পাওয়া যায় এবং সেই দানা দিয়ে আমরা ভর্তা করেও খাই। বলছিলাম কালোজিরা কথা।
কালোজিরা উপকার সম্পর্কে জানে না এমন লোক পাওয়া যাবে না। আমরা সকলেই জানি কালোজিরা উপকার কি, কালোজিরা খেলে সমস্ত কিছু ভালো হয়ে যায়। কালোজিরা হলো মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ। আজকে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আর্টিকেল দেওয়া হল।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারতা ও অপকারিতা
- হজমের সমস্যা দূর করতে কালোজিরা
- স্মরণ শক্তির বৃদ্ধি করতে কালোজিরা
- লিভারের সমস্যা সরাতে কালোজিরা
- মাথাব্যথা দূর করতে কালোজিরা
- মাতৃদুগ্ধ নারীদের জন্য কালোজিরা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরা
- ত্বকের যত্নে ও চুল পড়া রোধ করতে কালোজিরা
- ওজন মেদ ও হৃদরোগ কমাতে কালোজিরা
- কালোজিরার অপকারিতা
- কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
হজমের সমস্যা দূর করতে কালোজিরা
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে একটি মহা মূল্যে উপকার হলো হজমের সমস্যা দূর করে। হজমের সমস্যায় যদি কেউ ১ চা-চামচ বা 2 চা-চামচ কালোজিরা বেটে পানি খায়। তাহলে তার হজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এভাবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার যদি কেউ কালোজিরা পানি খায়। তাহলে তার হজম শক্তি বেড়ে যাবে এবং তার হজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপা বা পেট ফোলা যেই বিষয়গুলো রয়েছে। ওগুলো দূর হয়ে যাবে। আমাদের হজম শক্তি ভালো রাখতে হলে নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে।
স্মরণ শক্তির বৃদ্ধি করতে কালোজিরা
কালোজিরা উপকারিতার মধ্যে আর একটু উপকার হলো স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করতে কালোজিরা। প্রতিদিন এক কাপ রং চা বা পুদিনা পাতার রস বা কমলার রসের সাথে বা আপেলের জুসের সাথে যদি কেউ এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে তিনবার খাই। তাহলে সে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাবে।
এবং এভাবে খেলে দুশ্চিন্তাও দূর হয়ে যায়। এছাড়া কালোজিরা মেধা বিকাশ বা মেধা শক্তি বাড়ানোর জন্য দ্বিগুন কাজ করে থাকে। কারণ কালোজিরার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। যা মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলের জন্য বা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার জন্য কালোজিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমাদের নিয়মিত কলেজের খাওয়া প্রয়োজন।
লিভারের সমস্যা সরাতে কালোজিরা
কালোজিরা খাওয়ার আর একটি উপকার হলো লিভারের সমস্যা বা জন্ডিসের সমস্যা দূর করে। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আলফা টক্সিন নামক ভাইরাস ধ্বংস করে এই কালোজিরা। কালোজিরা যদি কেউ প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে তিনবার খায়। তাহলে তার লিভারের সমস্যা এবং জন্ডিসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ হয়ে যায়। এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতির সাধন করে বা উন্নতি হয়। কালোজিরা খেলে আমাদের অনেক রকমের উপকার হয়। যেমন, শরীরের ব্যথা কমে, গলা ব্যথা বা দাঁতের ব্যথা কমে, চুল পড়া কমে, সর্দি-কাশি বা হাঁপানি কমে। আরো অনেক ধরনের রোগ রয়েছে যেগুলো সারাতে কালোজিরা আমাদেরকে সাহায্য করে।
তাছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও কালোজিরা অনেক সাহায্য করে। এ কালোজিরা সেবন করলে আমাদের লিভারের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারণ কালোজিরা তে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক। যদি কেউ ত্রিফলার শরবতের সাথে একটা চামচ কালোজিরা তেল প্রতিদিন সেবন করতে পারে। তাহলে সে দুই তিন সপ্তাহের ভিতর ভালো ফলাফল ভাবে বলে আসা করা যায়।
মাথাব্যথা দূর করতে কালোজিরা
আপনার যদি হঠাৎ মাথা ব্যথা হয়। তাহলে এক থেকে দুই চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে মালিশ করে নেবেন। এবং এক চামচ কালোজিরা তেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খাবেন। কালোজিরার উপকারের মধ্যে আরেকটু উপকার হলো মাথা ব্যথা দূর করে। এই কালোজিরা পিষে যে তেল বের করা হয়।
সে তেল দিয়ে যদি কেউ দিনে একবার থেকে দুইবার মাথা মালিশ করে। তাহলে তার মাথা ব্যথা দূর হয়ে যাবে। কারণ কালোজিরা তেলে রয়েছে অনেক উপকার। কালোজিরার তেল মাথায় দিলে মাথা ঠান্ডা হয়ে যায়। এই কালোজিরা তেলে অনেক ধরনের উপকার থাকে। কালোজিরা তেল ব্যবহার করে বা মাথায় লাগিয়ে মালিশ করে।
যদি কেউ ঘুমায় তাহলে তার ঘুমটি হবে শান্তিপূর্ণ এবং যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে। তারা কালোজিরার তেল নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। যদি কেউ কালোজিরা তেল দুই থেকে তিন সপ্তাহ ভালোভাবে খেতে পারে। এবং মাথায় মালিশ করতে পারে। তাহলে তার মাথাব্যথা একেবারে দূর হয়ে যাবে। এবং কালোজিরা তেল দিয়ে কপাল থেকে শুরু করে মাথা এ পাশ থেকে ও পাস ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। তাহলে মাথা ব্যথা দূর হবে।
মাতৃদুগ্ধ নারীদের জন্য কালোজিরা
কালোজিরার উপকারের মধ্যে আর একটি উপকার হলো। যেসব মায়েদের বুকে দুধ নেই তাদের বুকে দুধ নিয়ে এসে দেয়। মায়ের প্রতি রাতে যদি শোয়ার আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা ছোট করে দুধের সঙ্গে খেতে পারে। তাহলে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যার সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে তারা ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারলে আরো আরো ভালো হয়।
এছাড়া এক চা চামচ তেল সম পরিমাণ মধু সহ দৈনিক তিন থেকে চার বার নিয়মিত যদি খায়। তাহলে শতভাগ উপকারই হবে। তাই যাদের নতুন বাচ্চা হয়েছে এবং বুকে দুধ নেই। তাহলে তারা তেল প্রতিদিন চায়ের সাথে বা মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করবে। এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাবে। তাহলে তাদের দুধের প্রবাহ আস্তে আস্তে বেড়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরা
কালোজিরার সবচেয়ে বড় ক্ষমতা বা বড় উপকার হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কারণে অনেক মানুষ আজকে সুস্থ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কালোজিরা হলো মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ। বর্তমান সময়ে এসে ভেজাল মিশানো খাবার খেয়ে মানুষ আজকাল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছ।
এজন্য মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো অনেক প্রয়োজন। আর এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমরা বাড়াতে পারবো কালোজিরা সেবনের মাধ্যম। প্রতিদিন যদি কালোজিরা আমাদের খাদ্য তালিকায় যোগ করি। তাহলে আমাদের দেহের ক্ষমতা অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
এবং এর সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালোভাবে কাজ করবে। আমাদের কালোজিরা প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে খেতে হবে। এবং কালোজিরা এর তেল রয়েছে তা আমাদের ইউজ করতে হবে। এই কালোজিরা খেলে বা কালোজিরা তেল ইউজ করলে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।
ত্বকের যত্নে ও চুল পড়া রোধ করতে কালোজিরা
কালোজিরার তেলের অনেক উপকারে রয়েছে। তার মধ্যে আরও একটি উপকার হল ত্বকের যত্ন এবং চুল আদ্রতা বজায় রাখা। শীতকালে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার জন্য আমরা অনেকেই বডি লোশন ব্যবহার করে থাকি।
আমরা যদি চাই তাহলে বডি লোশন এর পরিবর্তে শুধু কালোজিরার তেল অথবা জাইতুন (অলিভ অয়েল) তেল এর সাথে কালোজিরা তেল মিশিয়ে সারা শরীরে ভালোভাবে মালিশ করতে পারি। তাহলে আমাদের ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকবে।
এবং এভাবে যদি আমরা শিশুদের মালিশ করে দেই। তাহলে আপনার শিশু বা আমাদের শিশুর ত্বকের আদ্রতা ও লাবণ্যময় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। এবং চর্মরোগের যে বিষয়টি রয়েছে তা থেকে মুক্তি পাবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই পদ্ধতি পুরো বছর ব্যবহার করতে হবে বা পালন করতে হবে।
ওজন মেদ ও হৃদরোগ কমাতে কালোজিরা
কালোজিরার তেল হার্টের রোগী অর্থাৎ যাদের হৃদরোগ রয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী। এই তেল দিনে এক চা চামচ কালোজিরা তেল এবং এক কাপ দুধ প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার যদি কেউ খায়। তাহলে তার হার্টের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এবং যদি হাটার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে হাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
সাথে যদি কালোজিরার তেল দিয়ে বুকে নিয়মিত যদি মালিশ করা হয়। তাহলে সে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। এবং তারা হাডের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আপনার যদি কালোজিরা খাবার অভ্যাস থাকে। তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালে মেদ বা চর্বি কমানোর জন্য এক চা চামচ মধুর সঙ্গে অর্ধেক চামচ বা এক চামচ কালোজিরা তেল খাবেন।
তাহলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ বা ভুঁড়ি কমে যাবে। আর যদি আপনার কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে আপনি নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করুন। যারা ওজন কমাতে চান তারা উষ্ণ গরম পানির সাথে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খাবেন।
তাহলে আপনাদের ভালো হবে। এবং আপনারা যদি কালোজিরা খেতে চান। তাহলে আপনারা কিছু কালোজিরা পাউডার ছিটিয়ে দিবেন। তাহলে আপনারা পান করে দেখুন অনেক উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ।
কালোজিরার অপকারিতা
কালোজিরা হার যেমন উপকার রয়েছে যেমন অপকার ও রয়েছে। কেউ যদি অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা খায়। তাহলে তার রক্তের শর্করা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এ রক্তের শর্করা কমে গেলে তার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। কালোজিরা গর্ভাবস্থায় এবং দুই বছরের বাচ্চা ও তার কম বয়সী বাচ্চাদের খাওয়া উচিত হবে না।
তবে তারা বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। আর আমরা যদি আরো যারা বেশি পরিমাণে কালোজিরা খায়। তাহলে আমাদের স্কিনে এলার্জি হতে পারে। সেজন্য পরিমাণ মতো কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে হবে। কালোজিরা অতিরিক্ত পরিমাণ সেবন করলে শরীর রক্ত জমাট বাঁধা কমে যায়। এবং এর ফলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। তাই আমাদের বেশি কালোজিরা না খেয়ে পরিমাণ মতো খেতে হবে।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হলো আমরা কালোজিরা দুইভাবে খেয়ে থাকি। একটা হল কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে থাকি এবং অন্যটি হলো কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকি। আবার বিভিন্নজন মধু, রসুন অনেক কিছুর সাথে মিশিয়ে খায়।
আর এভাবে কালোজিরা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। মধু ও কালোজিরা মিশ্রিত করে খাবার নিয়ম রয়েছে। কালোজিরার মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যদি সর্দি কাশি থাকে তাহলে ভালো হয়ে যায়।
লেখকের শেষ কথা
কালোজিরা। কালোজিরা হলো মানুষের জীবনের জন্য একটি উপকারী খাবার। যাতে রয়েছে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ। এই কালোজিরা খেলে আমাদের অনেক উপকার রয়েছে। যা আপনার উপকারে আর্টিকেলে পড়ে বুঝতে পেরেছেন বলে আশা করছি। কালোজিরা যদি আমরা কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে খাই মধু, চা বা অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে খায়।
তাহলে আমাদের উপকারটা বেশি হবে। যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনারা আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং নিচে একটি সুন্দর কমেন্ট করে যাবেন।
নাহিদ ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url